Breaking News

ইতিবাচকতার চর্চা

 

করতে হবে ইতিবাচকতার চর্চা

মন থেকে ইতিবাচক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমরা যদি মনে মনে সবসময় নেতিবাচকতাকে ধারণ করি, যেকোনো ক্ষেত্রে কেবল নেতিবাচকতাই খুঁজে বেড়াই, অর্থাৎ ছিদ্রান্বেষী হয়ে উঠি, তাতে মনে মনে কষ্ট পাব নিজেরাই।



ধরুন, আমার সাথে এমন কোনো একটি ঘটনা ঘটল, যে কারণে আমার উচিত খুশি হওয়া, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া, সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা। অথচ তা না করে আমি যদি জোর করে ওই ভালো ঘটনার মাঝেও মন্দ কিছু খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাই, এবং কোনো মন্দ একটি দিক

অনেক কষ্টে পেয়েও যাই, তাতে ক্ষতিটা আসলে কার হবে? আমারই হবে। কারণ ভালো একটি ঘটনা ঘটায় আমার আনন্দলাভের কথা ছিল। তার বদলে আমাকে এখন কষ্ট পেতে হবে, প্রবল মানসিক যন্ত্রণায় বিদ্ধ হতে হবে।

সুতরাং, অবশ্যই আমাদেরকে ইতিবাচক হতে হবে। তার মানে এই নয় যে খারাপ কাজের মাঝেও ইতিবাচকতা খুঁজতে হবে। যেটি খারাপ, সেটি তো সবসময়ই খারাপ ও নিন্দনীয়। সেরকম কাজকে অবশ্যই ধিক্কার জানাতে হবে, সেগুলোকে বর্জন করতে হবে। এটুকুই শুধু মাথায় রাখতে হবে যে, যেখানে কোনো খারাপের চিহ্ন নেই, জোর করে যেন তার ভিতরেও খারাপ খুঁজতে না যাই।

এবং এই ইতিবাচকতার বহিঃপ্রকাশ দৈনন্দিন জীবনে আমাদের আচার-আচরণেও ঘটাতে হবে। কেউ যদি এমন কাজ করে থাকে যার জন্য সে প্রশংসার দাবিদার, একটু প্রশংসা তার প্রাপ্য, তাহলে অবশ্যই মন খুলে তার প্রশংসা করতে হবে, তাকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে হবে। পাশাপাশি গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে যেসব ক্ষেত্রে তার আরো উন্নতির জায়গা আছে, সেগুলোও তাকে ধরিয়ে দিতে হবে।

রাগ দমন করতে হবে

রাগ একটি খুবই বাজে জিনিস, যা একটু একটু করে আমাদেরকে ধ্বংস করে দেয়। যখন আমাদের সাথে খুব খারাপ কিছু ঘটে, যা আমাদের প্রত্যাশা ছিল না, কিংবা যখন আমরা কারো কাছ থেকে খুব বাজে ব্যবহারের সম্মুখীন হই, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা অনেক রেগে যাই, ক্রোধান্বিত হয়ে পড়ি। রাগের মাথায় এমন কিছু একটা করে বসি, যাতে মানুষ হিসেবে নিজেরাই অনেক ছোট হয়ে যাই, এবং অনেক অনর্থক বিপদও ডেকে আনি। তাই রাগকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

খুবই নেতিবাচক এই মানসিক অনুভূতি থেকে বাঁচার প্রধান উপায় হলো ক্ষমাশীল হয়ে ওঠা। আমার সাথে কেউ খুব বাজে কাজ করেছে? তাই আমি তার উপর মনে মনে রাগ পুষে রাখব? সুযোগ খুঁজব তার কাজের প্রতিশোধ নেয়ার, তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার? এ ধরনের মানসিকতা যদি আমি পোষণ করি, তাতে আমি নিজেই নিজের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করব। কেননা প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব আমার রাতের ঘুম কেড়ে নেবে, মনের যাবতীয় ইতিবাচক অনুভূতিগুলোকে অকেজো করে দেবে। তাই আমার জন্য সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত কাজ হবে তার উপর প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা না করে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া, এবং এর মাধ্যমে নিজের মনকে কলুষতার হাত থেকে রক্ষা করা।

তবে এটিও খুবই সত্যি যে এ ধরনের কথা বলা যতটা সহজ, নিজেদের জীবনে তার বাস্তব প্রয়োগ ঘটানো ঠিক ততটাই কঠিন। কিন্তু তাই বলে তো আর আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না। নিজেদের মনের নিয়ন্ত্রণ অন্য কারো হাতে তুলে দিতে পারি না। সেটি হবে মানুষ হিসেবে আমাদের নিজেদের পরাজয়। তাই যত কষ্টকরই হোক না কেন, আমাদেরকে মনের সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মনকে ধীর-স্থির-শান্ত করে তুলতে হবে। দরকারে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে।

পরমতসহিষ্ণু হতে হবেআমাদের একটি বড় সমস্যা হলো, আমরা বিপক্ষ মতকে একেবারেই সহ্য করতে পারি না। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব আদর্শ, মূল্যবোধ, নৈতিকতার জায়গা থাকে, এবং আমরা সবসময় সেগুলোকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই। এতে কোনোই সমস্যা ছিল না, যদি না আমরা আমাদের আদর্শ, মূল্যবোধ, নৈতিকতার বিরোধী কারো উপর অকারণে আগ্রাসী হয়ে না উঠতাম।

খুব সহজ একটি উদাহরণই দেয়া যাক। ফুটবল খেলায় আমি এক দলকে পছন্দ করি। অন্য কেউ অন্য কোনো দলকে পছন্দ করে। এটি তো হতেই পারে, তাই না? প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ভালো লাগা-মন্দ লাগা, পছন্দ-অপছন্দের জায়গা থাকবে। তার ওই ভীষণ ব্যক্তিগত জায়গাগুলোকে আমাদের অবশ্যই উচিত সম্মান করা। তা না করে আমরা যদি মারমুখী হয়ে যাই যে কেন সে-ও আমার মতো একই দলকে সমর্থন করে না, কেন সে 'ভুল' দলকে সমর্থন করে, সেটি হবে আমার তরফ থেকে খুবই অযৌক্তিক আচরণ।

সঠিক-ভুল এগুলো তো খুবই আপেক্ষিক বিষয়। আমার কাছে যা সঠিক, অন্যের কাছে তা ভুল লাগতেই পারে। আবার অন্যের সঠিককেও আমার কাছে ভুল মনে হতে পারে। এর কারণ, তার আর আমার মানসিকতার পার্থক্য। এখন আমি তো চাইলেই তাকে আমার মতো মানসিকতার অধিকারী করে তুলতে পারি না। তাই সেটি নিয়ে আমার বাড়াবাড়িও করাও উচিত না। আমি সর্বোচ্চ যেটি পারি, তা হলো একটি গঠনমূলক বিতর্কের ক্ষেত্র তৈরি করা। অর্থাৎ এমন একটি আবহ তৈরি করা, যেখানে আমিও আমার মতটা তুলে ধরতে পারব, আবার সে-ও তার মতটা তুলে ধরতে পারবে।

 

Download File

নিজেদের অবস্থানকে এভাবে আমরা তুলে ধরতে পারি। কিন্তু কখনো বিষয়টা এমন হওয়া যাবে না যে শুধু আমি একাই কথা বলে যাব, অপর পক্ষকে শুধু শুনে যেতে হবে। নিজের কথা বলার পাশাপাশি আরো বেশি মনোযোগ দিয়ে আমাদেরকে অন্যের কথা শুনতে হবে। আবার এমনটিও নয় যে বিতর্ক শেষে কোনো একটি

পক্ষকে হার মানতেই হবে। কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জায়গায় না পৌঁছেও বিতর্ক করা যেতে পারে, যা সবাইকে সমান সুযোগ দেয় নিজ নিজ অবস্থান ব্যাখ্যা করার। এই সুযোগটি আমাদের অবশ্যই সবাইকে দিতে হবে, এবং একটি মত যতই আমাদের অপছন্দ হোক না কেন, সেটিকে প্রকাশ করতে দিতেই হবে।

No comments