Breaking News

ঔষধ খাওয়ার নিয়ম কানুন- পর্ব-১/ Medicine taking rules-part-1

 

ওষুধ খাওয়ার নিয়ম-কানুন



নন্দন প্রধান ফার্মাসিস্টবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতালআসানসোল স্বাস্থ্যকেন্দ্র

 ঔষধওষুধে রোগ সারে আমরা এটাই জানি আর এটা খেয়ে নিতে হয়, অথবা লাগাতে হয়, এছাড়া অনেক ঔষধ ইঞ্জেকশন হিসাবে নিতে হয় এছাড়াও আরো অনেক পদ্ধতির মাধ্যমে ঔষধ নেওয়া যায়। যেমন বডি ক্যাভিটি দিয়ে বা প্যাচের সাহায্যে ইত্যাদি। কিন্তু যখন ঔষধ খাওয়ার প্রসঙ্গ আছে সেখানে আমরা না জেনে অনেক রকম ভুল করে ফেলি যার জন্য শরীরে নানারকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীকালে শরীরে বিভিন্ন রকম অসুবিধার সৃষ্টি করে। আমরা আসুন আমরা দেখে
নেই জেনে নেই ঔষধ খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি গুলি। আমরা আমাদের এই আলোচনাটি দুটি পর্বের সাহায্যে উপস্থাপন করছি-
 
Health Jiggasa

 

      ষুধ মূলত এক ধরণের রাসায়নিক যৌগ। ওষুধ সেবনের নানান নিয়ম কানুন নিয়ে প্রত্যেক ফার্মাসিস্ট দীর্ঘ অধ্যবসায়ে প্রশিক্ষিত হন। এবং এই বিষয়ের যে বিদ্যা তাকে বলা হয় chronotherapeutics যে কোনাে রোগের ধরনের অনুপাতে সঠিক মাত্রার ওষুধসময়ের সঠিক
তাল জ্ঞানে শরীরের সবচেয়ে কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রেখে শরীরে সবচেয়ে বেশি অবশােষণ ঘটনাই 
Chronotherapeutics এর আসল কেরামতি। যার সাহায্যে অসুস্থ শরীরের নানান সমস্যার নিবারণ করার চষ্টা করা হয়। ওষুধ খাওয়ার সাধারণ নিয়ম-কানুন নিয়ে আমরা কম-বেশি ওয়াকিবহাল হলেও একেবারে সাধারণ জনগণ তেমন কিছুই জানেন না। ওষুধ সেবনের সামান্য ভুল ক্রুটিতে বিরাট ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে থাকে। তাই সাধারণের ওষুধ সেবনের সচেতনায়আমার লেখায় Chronotherapeutics এর জ্ঞান গম্ভীর বিষয়গুলি এড়িয়ে সহজভাবে কিছু জেনে রাখার বিষয় তুলে ধরছি। উল্লেখ্যআমি শুধুমাত্র অসুস্থ শরীরে ওষুধ প্রয়ােগের কথা বলছি। শরীর থাকলে আসলে তার নিত্য কিছু না কিছু শারীরিক চরিত্রের পরিবর্তন ঘটবে এবং এটাই স্বাভাবিক। আজ রােদ ঝলমল থাকলে আকাশ কাল একটু মুখভার থাকতেই পারে। এটি প্রাকৃতিক এবং নিয়ম-কানুন। ঋতু অনুযায়ীবয়স অনুযায়ী শরীরে স্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। এক-আধটু কষ্ট ভােগও হয়। এই পরিবর্তনকে শারীরিক অসুস্থতা ভেঙে কথায় কথায় যদি ওষুধ প্রয়ােগ করি সেক্ষেত্রে এবং প্রায়শই তাই হয়ে থাকে সুস্থ শরীরকে নব্বই ভাগ ক্ষেত্রে অসুস্থ করে তুলি। শরীরের প্রতিরােধ ক্ষমতায় আস্থা না রেখে আমরা প্রায়শই প্রতিবিধানে মেতে উঠি। অথচ প্রতিটি শরীরের নিজস্ব প্রতিরােধ ক্ষমতা অসীম। একমাত্র একেই পুঁজি করে যারা জীবন বাজি রাখেনবাজি রাখার কৌশল করায়ত্ব করেনতারাই মৃত্যুঞ্জয়।
তাহলে বাজারে যে এত রকমের ওষুধ। রেক ভর্তি করে থরে থরে সাজানো এত রকমের ক্যাপসুলট্যাবলেটসিরাপইনজেকশন। কাদের জন্যএককথায় মানুষ নামক গিনিপিগ এর জন্য। আজকালকার অধিকাংশ ডাক্তারবাবুরা মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের বদলে মেডিসিন ট্রিটমেন্টকেই ধ্যান জ্ঞান করে ফেলেছেন।
বাজারে ওষুধের ৬০ হাজার রকমের যৌগ। যার নব্বই ভাগ অপ্রয়ােজনীয়অকেজোএমনকি অবৈজ্ঞানিক মিশ্রন। উন্নত দেশের নিষিদ্ধ ওষুধ অতি সহজেই এখানে যেমন মেলেফার্মেসিগুলাে ফার্মাসিস্ট ছাড়াই চলার বেআইনিটাই এখানে আইন। বাজারময় ভেজাল ওষুধের রমরমা। অর্থাৎ এ দেশের স্বাস্থ্যরক্ষার ব্যাপারে অধিকাংশ স্বাস্থ্য ব্যাপারীরা সুস্থ শরীরকে অসুস্থ করার খুড়াের কল দেশময় পেতে রেখেছেন। ভারতের রাজ্য ভিত্তিক শিক্ষার প্রসারে কেরল যেমন এক নম্বরেতথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্ণাটক যেমনএক নম্বরেমাদকাসক্তিতে পঞ্জাব যেমন এক নম্বরে তেমনি ওষুধ খাওয়ার বাতিকে পশ্চিমবঙ্গ ভারত সেরা। ফেসবুকময় অসাধারণ সেই বার্তাটি উল্লেখ না করে পারছি না— “The Pharmaceutical Industry does not create cures, They create customers”. তবু বলি বার্তাটি সম্পূর্ণ সত্যি নয়। সত্যি অসুখ হলে ওষুধের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু ওষুধের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার প্রয়ােজন।
 
খাওয়ার আগে না পরে: ওষুধ ব্যবহারের নানা উপায় ও পদ্ধতি আছে। কিছু ওযুধ আমরা খাওয়ার আগে খেতে বলিকিছু পরে কিংবা খাবার সাথে। আবার অনেক ওষুধ খালি পেটে বলা হয়। আবার কিছু কিছু ওষুধ আছে যার খাবার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। খালি পেটে‘ বলতে অনেকেই বোঝেন সকালে খালি পেটে। তা কিন্তু নয়। দিনের অন্যসময় পেটে ওষুধ নিতে হয়সেগুলিকে আমরা বলি খাবার সময় থেকে দূরে। বােঝার জন্য বলিএসব ক্ষেত্রে খালি পেটে বলতে বােঝায় নিয়মিত খাবার সময়ের এক ঘন্টা আগে বা খাওয়ার দু-ঘন্টা পরে।
 অনেক সময় ওষুধখাবার খাওয়ার আগে খেতে বলতে হয়। তার অর্থ খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা। বা কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে ওষুধটি খেতে হবে। আসলে পাকস্থলিতে যদি সদ্য খাবার থাকে অনেক ওযুধ আছে যেগুলি খাবারের দ্বারা বিষক্রিয়া হয়ে যায়। আবার অনেক ওষুধ খাবারের সঙ্গে বিরূপ বিক্রিয়া ঘটিয়ে ফেলে। মােদ্দা কথা ওযুধের সঠিক বিশেষণখাবার থাকলে হয় না। অনেক ওষুধই ফলের রস প্রধানতঃ আঙ্গুরের রসের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে ফেলে। কিছু ওষুধ আছে যাদের বিশেষণ সবচেয়ে ভালাে হয়। ধারাগুলির থেকে স্মল ইনটেস্টাইনে। ফলতঃ এই ওষুধগুলিকে শরীর তার শােষণের জন্য সময় নেয়। তাই খাবার খাওয়ার বেশ আগে বা অনেক পরে সেবন করতে হয়। মূলতঃ ফাঁকা পাকস্থলী অম্লত্বসম্পন্ন হয়। যা ওষুধের রাসায়নিক পদার্থকে ভেঙ্গে জারিত করে এবং বিশােষণে বেশি করে সাহায্য করে। 
তাই বলা যায় যে ওষুধগুলি খাবার খাওয়ার সঙ্গে বা তার পরে পরে ছাড়াঅধিকাংশ ওষুধগুলি রক্তে বিশেষণের স্বার্থে হয় খাওয়ার এক ঘন্টা থেকে ৩০ মিনিট পুর্বে বা খাওয়ার পরে হলে খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে খেতে হবে।
অনেক ওষুধ খাওয়ার সাথে বা পরে পরে‘ বলা হয় আমাদের পাকস্থলী হলো Acid-filled একটি ব্যাগ। কিন্তু সেই অ্যাসিডের বাড়বাড়ন্ত থামানাের জন্য প্রােটেকটিভ মিউকাস মেমব্রেনও রয়েছে। খাবার খাওয়ার পর হরমোনের ক্রিয়ায় অ্যাসিড ক্ষরন ঘটলেও পাকস্থলীর গায়ের মিউকাস মেমব্রেন তা সহজে নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়ে। ফলে NSAID জাতীয় ওষুধগুলি অর্থাৎ Aspirin, ibuprofen সহ ব্যথা নিরােধক ওষুধগুলি ভরা পেটে খাওয়া উচিত। অযাচিত লাইনিং থেকে মিউকাস ক্ষরণে বাধা দেয়যা অ্যাসিডের উপস্থিতিকে বাড়িয়ে তােলে। কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধ যেমন Prednisolone, Dexamethasone প্রভৃতি খাওয়ার পরে পরে না খেলে স্টোমাক ইরিটেশান বেড়ে যায়। তবে পুরােপুরি ভরাপেট সম্ভব না হলে বিস্কুট স্যান্ডউইচ কিংবা এক গ্লাস দুধও যথেষ্ট। অনেক ওষুধ খালি পেটে খেলে। অত্যাধিক বমি ভাব বা বমি হয় যেমন Allopurinol, bromocriptine. এগুলিও তাই ভরাপেটে খেতে হবে।
খাবার পাকস্থলিতে যাওয়ার পর অ্যাসিড ক্ষরনে অনেকের গলা-বুক জ্বালাবদহজম বা চোঁয়া ঢেকুরে ব্যতিব্যস্ত হন। সেক্ষেত্রে অ্যান্টাসিডসে ট্যাবলেট হােক বা লিকুইড খাবার ঠিক পরেই বা খাবার চলাকালীন সেবন শ্রেয়। মুখে খাওয়ার ডায়াবেটিসের ওষুধ বা সাধারণত রক্তের শর্করা লেবেলকে কমায়ভরা পেট থেকে দুরে খাবার সময় খেলে অনেক সময় hypoglycemia ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাই এই জাতীয় ওষুধগুলি খাওয়ার চলাকালীন খাওয়া উচিত। ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস বা যাদের এনজাইম সাপ্লিমেন্ট অত্যন্ত প্রয়ােজন তারাও এই ওষুধগুলি খাওয়ারসময়ের মধ্যবর্তীকালে খেলে সর্বোচ্চ লাভ।
    এডস রোগের ঔষধ, Ritonavir, Saquinavir, Nesfinavir ঔষধগুলি প্রকৃত শোষিত হয় খাওয়ার একমাত্র পাকস্থলী বা অন্ত্রে থাকলে তাই এগুলি সম্পূর্ণ ভরাপেটে অর্থাৎ খাওয়ার পরে পরে গ্রহণ করা উচিত।
গ্লোসাইটিসস্টোমাটাইটিসজিনজিভাইটিসপ্রকৃতি মুখগহ্বরের রোগে নানান মাউথ প্যান্ট ও মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা হয়যথাক্রমে জীভে ঘা, মুখগহ্বরের ভেতরের দেয়ালে ঘা ও দাঁতের মাড়ির রোগে। বলাবাহুল্য এগুলি মুখে লাগানো এবং থুতুর সঙ্গে পেটেও যায়সেক্ষেত্রে ভয়ের কিছু থাকে না। কিন্তু মূল খাদ্য গ্রহণের পরে লাগানো উচিত। কারণ এই ওষুধগুলো ব্যবহারের পর অন্তত ঘন্টাখানেক কোন রকম খাদ্য গ্রহণ বা পানীয় সেবন অনুচিত। না হলে ওষুধগুলি ধুয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ওষুধের সাথে ফল খাওয়া বা ফলের রস খাওয়ার একটি চল আছে। আবার বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক ফলের রসের সঙ্গে ঔষধ গুলিয়ে খাওয়ান তা ঠিক নয় ফুল বা ফলের রসের উপাদান এর সঙ্গে ওষুধের উপাদান এর বিক্রিয়া ঘটে। ব্লাড প্রেসারহাটের অনেক ঔষধ ফলের রসের সঙ্গে বিশেষত আঙ্গুরের নানান গোলযোগ হতে পারে। সুতরাং সাবধান।

 






Download File




সাধারণত ওষুধ খেতে হয় সাধারণ ঠান্ডা জল দিয়ে। ওষুধ মুখে খাবার আগে প্রথমে এক ঘোঁট জল খেয়ে নেবেন। খাদ্যনালী ভিজে গেলে মসৃণভাবে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল চলে যাবে। কোনো নির্দেশ না থাকলে ওষুধ সেবনের পর এক গ্লাস জল খান। জলে গুলে খাওয়া ট্যাবলেট সাধারণ ঠান্ডা জলে গুলে খাওয়ার নিয়ম। গরম জিনিসে ওষুধ মেশানো বারণ। এতে করে ওষুধের অনেক সক্রিয় উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খাবারের সঙ্গে ওষুধ মেশানো উচিত নয়। ভাতে বা ঝোলে মেশানো অবৈজ্ঞানিক। আয়রন ট্যাবলেট যদি কোলড্রিংস বা চা দিয়ে খাওয়া হয়ওষুধের শরীরে মধ্যে শোষণ ই হবে না। আফিম ও চা সেবনকারীগনযারা দীর্ঘদিন অভ্যস্ত তারা যতদূর পারবেন ঔষধ ব্যাবহারকালীন পরিমাণ ক্রমশ অল্প ব্যবহার করবেন। তামাকবিড়িসিগারেট খাওয়ার এক ঘন্টা
আগে বা পরে এবং আফিম খাওয়ার দু
ঘণ্টা আগে বা পরে ঔষধ সেবন করা উচিত।

No comments