Breaking News

সঙ্গীত স্বরগ্রামের বিজ্ঞান: ভারতীয় সঙ্গীত

 

সঙ্গীত স্বরগ্রামের বিজ্ঞান: ভারতীয় সঙ্গীত



  • 16 Sep 2022

    পদার্থবিদ্যার কিছু বিস্ময় 

    %e0%a6%b8%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a7%80%e0%a6%a4-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9e
    %e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%ad%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4
    শুভা সামন্ত

    স্কটিশ চার্চ কলেজ

     

     আগের পর্ব  প্রথম পর্ব

    যেকোনো একটি সাঙ্গীতিক স্বর (যেমন হারমোনিয়ামের “সা” অথবা “রে” অথবা “গা”) আসলে অনেকগুলো সুরের সমন্বয়ে তৈরী যাদের কম্পাঙ্ক f, 2f, 3f, ⋯ এই শ্রেণীতে বাড়তে থাকে। এই একেকটি সুর হলো শব্দের একেকটি সাইন-তরঙ্গ (sine wave)। কোনো একটি স্বরে সর্বনিম্ন f কম্পাঙ্কের সুরটি সবথেকে জোরালো হয় এবং পরবর্তী কম্পাঙ্কের সুরগুলো উত্তরোত্তর কম জোরালো হতে থাকে। এই f কে বলা হয় স্বরটির মূলকম্পাঙ্ক (fundamental frequency) এবং পরবর্তী সুরগুলোকে বলা হয় সমমেল (harmonic)। এখন দুটি স্বরের মূলকম্পাঙ্কের অনুপাত যদি 2/1,3/2, 4/3, 5/4, ⋯ এইরকম দুটো ছোট ছোট পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হিসেবে লেখা যায়, তাহলে তাদের কিছু অপেক্ষাকৃত জোরালো সমমেলের কম্পাঙ্ক মিলে যাবে। এইরকম দুটি স্বর একসাথে বা একটির পর আর একটি খুব তাড়াতাড়ি বাজালে আমাদের কানে তাদের সঙ্গতি মধুর শোনায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই সুন্দর গাণিতিক-নিয়ম-মানা স্বর-সঙ্গতিই সঙ্গীতসৃষ্টির মূল উপাদান, তা পাশ্চাত্য সঙ্গীত হোক বা ভারতীয় সঙ্গীত। এই গাণিতিক নিয়মটি থেকেই স্বরগুলির অবস্থান (অর্থাৎ মূলকম্পাঙ্ক) নির্ণয়ের তত্ত্ব থেকে শুরু করে আরও নানা সাঙ্গীতিক ধারণার উৎপত্তি হয়েছে। আগের পর্বে লেখিকা পাশ্চাত্য সঙ্গীতের পটভূমিতে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের এই আশ্চর্য প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আজকের পর্বে আছে ভারতীয় সঙ্গীত নিয়ে আলোচনা। 
     
     

    আগের পর্বে পাশ্চাত্য সঙ্গীত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমরা দেখেছি যে, কোনো একটি স্বর (ধরা যাক C) এবং তার দ্বিগুণ কম্পাঙ্কের স্বরের (তাকে বলা যাক C’) মধ্যবর্তী অঞ্চলটিকে একটি অক্টেভ বলা হয়। C এবং C’ স্বর দুটিকে আমাদের কানে প্রায় একইরকম শোনায় বলে সঙ্গীতের বিচারে এদের আলাদা স্বর ধরা হয় না। এই  C আর  C’ এর মাঝে আরও ছটি  “শুদ্ধ” স্বর থাকে, যাদের চিহ্নিত করা হয় D, E, F, G, A এবং B দিয়ে। সুতরাং C থেকে শুরু করে B পর্যন্ত এক অক্টেভে মোট সাতটা শুদ্ধ স্বর হয়। তবে এক অক্টেভের ব্যবধানকে 12 টি ভাগে ভাগ করে সৃষ্ট বারো স্বরবিশিষ্ট ক্রোম্যাটিক স্কেল সঙ্গীত রচনার মূল কাঠামো হিসাবে ব্যবহৃত হয়। 

    সঙ্গীত রচনা বা পরিবেশন করার সময় এই ১২ টি স্বর থেকে বিশেষ কয়েকটি স্বর কে বেছে নিয়ে কেবল সেইগুলি রচনাটিতে ব্যবহার করা হয়। ভাষার যেমন বর্ণমালা থাকে এও ঠিক সেরকম একধরণের সাঙ্গীতিক বর্ণমালা। সঙ্গীতে ব্যবহৃত স্বরসমূহের একটি সুবিন্যস্ত ক্রমকে স্কেল বা স্বরগ্রাম বলা হয়। পাশ্চাত্য সঙ্গীতে নানারকম স্কেল গঠনের গাণিতিক ভিত্তি নিয়ে আমরা আগের পর্বে আলোচনা করেছি।  

     

    এই পর্বে আমরা ভারতীয় সঙ্গীতের বিভিন্ন স্কেল বা স্বরগ্রাম নিয়ে 

    ভারতীয় সঙ্গীতের পরিভাষা 

    ভারতীয় সঙ্গীতেও এক অক্টেভে শুদ্ধ স্বরের সংখ্যা সাত, এই সংখ্যাটার ভিত্তিতে অক্টেভের নাম দেওয়া হয়েছে সপ্তক। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মতোই ভারতীয় সঙ্গীতেও শুদ্ধ এবং কড়ি ও কোমল মিলিয়ে এক সপ্তকে স্বরসংখ্যা বারো, কিন্তু এই বারোটি স্বর বাইশটি “শ্রুতি”-র ওপর অবস্থিত। এই শ্রুতি হলো ভারতীয় সঙ্গীতের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা আমাদের পাশ্চাত্য সঙ্গীতের আলোচনায় আসেনি। তাই শুরুতে শ্রুতি কী, সেটা জেনে নেওয়া যাক।

    অসংখ্য নাদ বা শব্দ থেকে যে নাদগুলি পরস্পরের পার্থক্যসহ বিশেষভাবে শোনা যায়, সঙ্গীতশাস্ত্রে তাদের নাম শ্রুতি। অতএব স্বরের সূক্ষ্মতর বিভাগের নাম শ্রুতি। আধুনিক মত অনুসারে এক শ্রুতি থেকে আর এক শ্রুতির ব্যবধান সমান নয়। 

    প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীতে বাইশটি শ্রুতির ওপর সাতটি শুদ্ধ স্বরকে স্থাপিত করে সেই সাত স্বরের ক্রমিক সমষ্টিকে বলা হতো গ্রাম। অর্থাৎ ভারতীয় সঙ্গীতের ভিত্তি তৈরী করেছে সাতটি মূলস্বর। সাতটি মূলস্বরের সমন্বয়ে গঠিত এই স্বরগ্রামকে বলা হয় সপ্তক। স্বরগুলি হলো সা (ষড়জ), রে (ঋষভ), গা (গান্ধার), মা (মধ্যম), পা (পঞ্চম), ধা (ধৈবত), নি (নিষাদ)। এই সাতটি স্বরের সঙ্গে পরবর্তী সা স্বরটিকে অন্তর্ভুক্ত করে গঠিত হয় একটি অষ্টক। ভারতীয় শুদ্ধ সপ্তক পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মেজর স্কেলের সমতুল।

    প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীতে বাইশটি শ্রুতির ওপর সাতটি শুদ্ধ স্বরকে স্থাপিত করে সেই সাত স্বরের ক্রমিক সমষ্টিকে বলা হতো গ্রাম। অর্থাৎ ভারতীয় সঙ্গীতের ভিত্তি তৈরী করেছে সাতটি মূলস্বর।

    একটি নির্দিষ্ট স্বরগ্রামের ক্ষেত্রে সপ্তকের প্রথম ও পঞ্চম স্বর—সা এবং পা-এর কম্পাঙ্ক স্থির। তাই এদের বলা হয় অটল স্বর। অন্য পাঁচটি স্বর—রে, গা, মা, ধা, নি—এদের প্রত্যেকের দুটি করে পৃথক রূপ আছে।  এক্ষেত্রে পাঁচটি শুদ্ধ স্বর ছাড়াও রয়েছে পাঁচটি কড়ি বা কোমল স্বর। এই স্বরগুলি হলো ঋ, জ্ঞ, হ্ম, দ, ণ—এর মধ্যে ঋ, জ্ঞ, দ, ণ যথাক্রমে শুদ্ধ রে, গা, ধা, নি-র কোমল স্বর বা কম কম্পাঙ্কের স্বর এবং হ্ম হলো শুদ্ধ মা-এর কড়ি বা তীব্র স্বর অর্থাৎ উচ্চ কম্পাঙ্কের স্বর। বস্তুত, একটি সপ্তকের মধ্যে সাতটি শুদ্ধ এবং কড়ি ও কোমল মিলিয়ে পাঁচটি অর্থাৎ মোট বারোটি স্বর আছে। 





Download File

ভারতীয় সঙ্গীতে মূলত তিনটি প্রধান সপ্তক ব্যবহৃত হয়। মধ্য সপ্তক হলো এমন একটি স্বরগ্রাম যা গায়কের কণ্ঠের বা বাদকের যন্ত্রের সর্বাধিক স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। অন্যান্য স্কেল অর্থাৎ ভিন্ন মাত্রার স্বরগ্রামগুলি মধ্য সপ্তকের সাপেক্ষে নির্দিষ্ট করা হয়। সুতরাং, মধ্য সপ্তক থেকেই সমস্ত গণনার শুরু। কম্পাঙ্কের বিচারে মধ্য সপ্তকের নিম্নের অষ্টককে বলা হয় মন্দ্র সপ্তক এবং উচ্চ অষ্টককে বলা হয় তার সপ্তক। অর্থাৎ মন্দ্র সপ্তক হলো মধ্য সপ্তকের তুলনায় খাদের স্বরসমষ্টি আর তার সপ্তক হলো মধ্য সপ্তকের তুলনায় চড়ার স্বরসমষ্টি। ভারতীয় সঙ্গীতে মন্দ্র এবং তার সপ্তকের স্বরগুলি বোঝাতে যথাক্রমে হসন্ত (্)­ এবং রেফ (′) চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। 

১ নং ছকে ইকোয়াল টেম্পার্ড স্কেল অনুযায়ী ভারতীয় স্বরসপ্তকের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যেখানে প্রদত্ত কম্পাঙ্কগুলি একটি তিন অক্টেভসম্পন্ন হারমোনিয়ামের রীডগুলির কম্পনে উৎপন্ন স্বরসমূহের কম্পাঙ্ক। ছকের ৩ নং স্তম্ভে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের একটি স্বর বা নোটের নাম এবং তার পাশে সংশ্লিষ্ট অক্টেভ সংখ্যা দেওয়া আছে। এটি স্বরলিপি বা নোটেশন লেখার একটি বিশেষ পদ্ধতি যাকে বলা হয় বিজ্ঞানসম্মত পিচ নোটেশন। অক্টেভসংখ্যা ‘শূন্য’ মানুষের শব্দ উপলব্ধির সর্বনিম্ন সীমা নির্দেশ করে। ছকের ৪ নং স্তম্ভে প্রদত্ত কম্পাঙ্কগুলির প্রতিটির মান আগেরটির ঠিক 2^\frac{1}{12}  গুণ

  • আলোচনা করবো।  শুরুতে বলে রাখা ভালো যে ভারতীয় সঙ্গীতে দুটি পৃথক পদ্ধতি প্রচলিত আছে—উত্তর-ভারতীয় হিন্দুস্তানী সঙ্গীত ও দক্ষিণ-ভারতীয় কর্নাটকী  সঙ্গীত। দুই পদ্ধতির স্বরের নাম ও স্বরের অবস্থান এক নয়। আজকের আলোচনায় আমরা হিন্দুস্তানী সঙ্গীত পদ্ধতির স্বরতালিকাই অনুসরণ করবো।

  • রাগিণী বলি তাকেই যা আপনার ভিতরকার সমুদয় সা-রে-গা-মা-গুলোকে সংগীত করে তোলে, তার পর থেকে তাদের আর গোলমাল করবার সাধ্য থাকে না। কিন্তু, সংগীতের ভিতরে এক-একটি সুর অন্য-সকল সুরকে ছাড়িয়ে বিশেষ হয়ে ওঠে—কোনোটাতে মধ্যম, কোনোটাতে কোমলগান্ধার, কোনোটাতে পঞ্চম।’




    No comments